শ্রম দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙ্গার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে চট্টগ্রামে ১৩৯তম মহান মে দিবস পালিত।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ, চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে আজ ১ মে ২০২৪ বুধবার বিকাল ৩ টায় চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে শিরিষ গাছ তলায় এক বিশাল শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা আহবায়ক খোরশেদ আলম এর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহবায়ক মোঃ এমরান হোসেন এর পরিচালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, চট্টগ্রাম জেলার সাবেক সভাপতি এয়ার মোহাম্মদ, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিনা আক্তার, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ শাকের, বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি আবদুল রাজ্জাক, বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কায়েমুল ইসলাম, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এম.এ রহমান, বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি আবদুল রাজ্জাক, বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সলিমুল্লা সুমন , বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি পটিয়া উপজেলার যুগ্ম আহবায়ক জামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন এর সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সহ সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, সামুদ্রিক মৎস্য শিকারী জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়ন এর সহ-সভাপতি শেখ ফরিদ, নৌ-যান মাস্টার ড্রাইভার ঐক্য পরিষদ এর আহবায়ক মোঃ ইউসুফ, বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, কোষাধ্যক্ষ জয়নাল আবেদিন জামাল, চট্টগ্রাম জেলা নির্মাণ শ্রমিক সংঘের সভাপতি জামাল হোসেন, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারী শ্রমিক ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক, বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সহ-সভাপতি ফিরোজা আক্তার রোজি, শাহিন শিকদার, তাহেরা বেগম, সহ সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা আক্তার, দপ্তর সম্পাদক মোঃ সুমন, ইপিজেড আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন ইমরান প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা জানান রক্তঝরা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৮ ঘন্টা শ্রম দিবসের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দাবি বাংলাদেশে আজও পরিপূর্ণ মাত্রায় বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু তাই নয় ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্প সেক্টরে শ্রম আইন অনুযায়ী ৮ ঘন্টা শ্রম দিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, মাসের ১০ তারিখের মধ্যে মজুরি পরিশোধের আইন থাকলেও মালিকরা তা মানে না আবার সরকারও তা বাস্তবায়নে কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ করে না। এছাড়া হোটেল সেক্টর, গার্মেন্টস, নৌ-যান, নির্মাণ ও পরিবহন সেক্টরে ৮ ঘন্টা শ্রম দিবসের নিয়ম উপেক্ষিত। আর জাতীয় মজুরি কমিশন ও নিম্নতম মূল মজুরি না থাকায় সেক্টর ভিত্তিক গেজেটের ক্ষেত্রে সরকার ও মালিকসহ মালিকগোষ্ঠির মনোনিত শ্রমিক প্রতিনিধি নির্বাচন করে বিভিন্ন সেক্টরে যে গেজেট প্রকাশ করা হচ্ছে তা মালিকগোষ্ঠির স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
এমনই এক বাস্তবতায় পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে ১৩৯তম মহান মে দিবস, তাই আজ প্রয়োজন মজুরি কমিশন গঠন ও জাতীয় নিত্নতম মজুরি ঘোষণা, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, কর্মক্ষেত্রসহ সার্বিক সামাজিক নিরাপত্তার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলা। আর তার জন্য প্রয়োজন শ্রেণি সচেতন নেতৃত্ব, সংগঠন ও লাগাতার সংগ্রাম। এছাড়াও নেতৃবৃন্দ বলেন, গার্মেন্টস শিল্পকে সামনে রেখে এদেশের শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে চলছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত। মে দিবসের রক্তঝরা সংগ্রামের গতিপথেও ছিল এমনি ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত। কিন্তু শ্রমিকদের একতা আর সংগ্রামের কাছে পরাস্থ হয়েছে সরকার ও মালিক।
বাংলাদেশে তার সাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে নৌ-যান সেক্টরে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন আর হোটেল সেক্টরে মে দিবসে সর্বাত্মক ছুটি ভোগের আন্দোলন। মে দিবসের শিক্ষা হচ্ছে ৮ ঘন্টা শ্রম দিবসের সংগ্রামকে শ্রেণি বৈষম্য উচ্ছেদের লক্ষ্যে অগ্রসর করা। একই সাথে সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের লক্ষ্যে বাজার পুনর্বন্টন নিয়ে সাম্রাজ্যবাদিরা যে প্রস্তুতি ইউক্রেনকে নিয়ে মার্কিন নেতৃত্ব ন্যাটোর সাথে রাশিয়ার যুদ্ধ, প্যালেস্টাইনে মার্কিনের মদদে ইসরায়েলের ধারবাহিক আগ্রাসন, গণহত্যা, তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে মার্কিন-চীন যুদ্ধ প্রস্তুতি এর বিপরিতে বিশ্ব শ্রমিকশ্রেণিকে পাল্টা প্রস্তুতি নিয়ে বিশ্ব বিপ্লবের লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হবে।
সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, ৮ ঘন্টা শ্রম দিবস, গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের বাস্তবায়নের জন্য দরকার জাতীয় ভিত্তিক ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন। সেক্ষেত্রে পুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আর সমালোচনার স্বাধীনতার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নগরীর নিউমার্কেট থেকে শুরু হয়ে কোতোয়ালী মোড় হয়ে নতুন রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে আবার নিউমার্কেট মোড়ে এসে শেষ হয়।